Ticker

6/recent/ticker-posts

প্রথম পৌষমেলায় খরচ হয়েছিল ১৭৩২ টাকা ১০ আনা !

shantiniketan-poushmela.jpg
শান্তিনিকেতনে পৌষ উৎসবে রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে আছেন ক্ষিতিমোহন সেন, সাগরময় ঘোষও।

 Poush Mela

 শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা শুধুমাত্র একটি মেলা নয়, এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম এই মেলার ধারণা শুরু করেন কলকাতার গোরিটির বাগানে। তার পঞ্চাশ বছর পরে, ১৮৯১ সালের ৭ পৌষ (বাংলা ১২৯৮ সাল) থেকে শান্তিনিকেতনে বিশেষ আঙ্গিকে পৌষ উৎসব পালন শুরু হয়। অবশেষে, ১৮৯৪ সালে মহর্ষির ট্রাস্ট ডিড অনুসারে, শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। তবে মহর্ষি নিজে কখনো শান্তিনিকেতনের মন্দির বা মেলা দেখতে পারেননি।

History and Tradition

প্রথম মেলার খরচ ও পরিকল্পনা :প্রথম পৌষমেলায় খরচ হয়েছিল ১৭৩২ টাকা ১০ আনা। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই মেলাকে তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষাদর্শের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এটি ছিল এক বৈচিত্র্যময় গ্রামীণ মেলা, যেখানে সাঁওতালদের বাঁশের বাঁশি, মাটির পুতুল, কাঠের জিনিস, এবং স্থানীয় হস্তশিল্পের প্রসার ঘটত।

অতীতের স্মৃতি: গুরুদেব ও পৌষ উৎসব

অমিতা দেব বলতেন, “সাতই পৌষের উৎসব শান্তিনিকেতনের দুর্গোৎসব যেন। ভোরবেলায় বৈতালিকে ‘আমার মুখের কথা তোমার নাম দিয়ে দাও ধুয়ে’ গানটি গেয়ে আশ্রম পরিক্রমা করতাম।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্দিরে দেওয়া ভাষণ ছিল দর্শকদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। তিনি বলেছিলেন, “... আজ এই পুণ্যদিনের প্রথম ভোরের আলোতে উৎসব দেবতার উজ্জ্বল বেশ পরে আমাদের সকলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। জাগো, আশ্রমবাসী সকলে জাগো।”

মেলার পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়া :গত শতাব্দীতে মেলার চেহারা বদলেছে। গ্রামীণ রূপের জায়গায় শহুরে স্টল, গাড়ি, টিভি, স্কুটার এবং কম্পিউটারের আগমন ঘটেছে। তবু মাটির পুতুল, গালার পশরা, এবং সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী তিরধনুক এখনও মেলার অমূল্য অংশ।
 
মেলার বিশেষ মুহূর্ত ও ব্যক্তিত্বদের স্মৃতি :শঙ্খ ঘোষ, শম্ভু মিত্র, অমর্ত্য সেন প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি মেলার স্মৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এক সময় ‘কালোর দোকান’-এ চলত আড্ডা। যদিও এটি এখন আর বসে না, ‘চাঁদের হাট’ নামের উদ্যোগের মাধ্যমে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের সেতুবন্ধন রচিত হচ্ছে।
 
লোকসংস্কৃতি ও বিনোদন :শান্তিদেব ঘোষ মঞ্চের অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন, যেখানে লোকসংস্কৃতি ও বাউল গানের পরিবেশনা হত। সনাতন দাস বাউলের গান “ও মন মাছ ধরতে বাসনা” এখনো মেলার প্রাণ।

বিশেষ আয়োজন: বাজি পোড়ানো ও সৃষ্টিশীলতার চূড়ান্ত প্রকাশ

মেলার রাতের আকাশ আলোকিত করে বাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠান। এর শেষ পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখাবয়ব ফুটে ওঠে, যা এক সৃষ্টিশীল বিস্ময়।

পৌষমেলার বর্তমান চেহারা : শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা এখন একটি আন্তর্জাতিক মেলা। তবে তার মূল ঐতিহ্য, গ্রামীণ ও সাংস্কৃতিক সত্তা এখনও অটুট রয়েছে।

শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা শুধু উৎসব নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। এখানে আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের মিশ্রণ এক অনন্য রূপে প্রকাশ পায়। মেলার স্মৃতি ও ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতির শিকড়কে জীবন্ত রাখে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ