২০২৫ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে বাংলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হতে চলেছে। রাজ্য সরকারের ডিএ (মহার্ঘ ভাতা), এসএসসি-র ২৬ হাজার চাকরি বাতিল এবং ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে একদিনেই। যদিও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওবিসি এবং এসএসসি মামলা একই দিনে ওঠার সম্ভাবনা কিছুটা কম।
ডিএ মামলার ইতিহাস ও সাম্প্রতিক আপডেট:
ডিএ মামলাটি প্রথমবার সুপ্রিম কোর্টে ওঠে ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল, রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় হারে ৩১ শতাংশ ডিএ দিতে হবে। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ প্রদান করতে গেলে রাজ্যের ওপর প্রায় ৪১,৭৭০ কোটি টাকার আর্থিক বোঝা পড়বে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক দফায় ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করলেও সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির শুনানি হতে পারে।
এসএসসি-র ২৬ হাজার চাকরি বাতিল:
এসএসসি-র ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্ট ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ জানতে চেয়েছিল, রাজ্যের কাছে যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করার ক্ষমতা রয়েছে কি না।
গত শুনানিতে বিচারপতি মন্তব্য করেন, “যোগ্য-অযোগ্য পৃথক করা সম্ভব না হলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করতে হবে।” মামলাটি রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওবিসি শংসাপত্র বিতর্ক:
রাজ্যের দেওয়া কয়েক লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। এর ফলে বহু মানুষ তাদের সংরক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাজ্য এই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করলেও শীর্ষ আদালত এখনও স্থগিতাদেশ দেয়নি।
আইনজীবী কপিল সিব্বল গত ডিসেম্বরে যুক্তি দেন, রঙ্গনাথ কমিশন মুসলিমদের সংরক্ষণ সুপারিশ করেছিল। তবে আদালত জানিয়েছে, শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া উচিত নয়। মামলাটি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পরবর্তী শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে সম্ভাব্য প্রভাব:
ডিএ, এসএসসি, এবং ওবিসি সংক্রান্ত এই তিনটি মামলা রাজ্যের প্রশাসন, অর্থনীতি এবং সামাজিক নীতির উপর বিশাল প্রভাব ফেলবে। ডিএ মামলার রায় রাজ্যের সরকারি কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এসএসসি মামলা শিক্ষাক্ষেত্রে বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে। আর ওবিসি শংসাপত্র মামলার রায় রাজ্যের সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
0 মন্তব্যসমূহ